স্বপ্ন হবে সত্যি ।। লেখা : ডাঃ জয়দীপ মুখোপাধ্যায়
অনলাইনে ক্লাসটা শেষ হতেই তুতুনের চোখদুটো যেন বুজে এলো। আবার একঘন্টা পরে ভূগোলের ক্লাস। দুপুরে না খেয়ে শুয়ে পড়লে মায়ের কাছে বকা খাওয়া অবধারিত।
তুতুন দেখতে পেলো ঘরটা অন্ধকার হয়ে এসেছে। ওর পাশে রাখা মোবাইল থেকে একটা হালকা নীলাভ আলো সেই অন্ধকারে ঠিকরে বেরোচ্ছে। একরাশ সাদা ধোঁয়া মোবাইলের নীল স্ক্রিন থেকে বেরিয়ে ওপরে উঠতে লাগলো। ধীরে ধীরে সেই ধোঁয়া একটা বিশাল ফুটবলের আকার নিলে তার সারা গায়ে বড়ো বড়ো শুঁড় গজিয়ে উঠলো। তুতুনের একটুও ভয় লাগছে না।
-“তুমি কে গো?”
ভরা গলায় সেই শুঁড়ওয়ালা বলটা থেকে আওয়াজ ভেসে এলো, “আমাকে চিনতে পারবে না। কিন্তু আমার জন্যই তোমার মা স্মার্ট ফোনটা তুমি না চাইতেই ক্লাস করতে দিয়েছে। এমনিতে তো দিতই না। স্কুলের ক্লাসে বসে রায় দিদিমনির বকাও আর শুনতে হয় না। আমার জন্যই তোমার বাবা সারাদিন বাড়িতে আছে আর বিকেলে তোমার সাথে ছাদে ক্রিকেট খেলছে। মা ভালো ভালো রান্না করে খাওয়াচ্ছে। কি আমাকে কেমন লাগছে?”
-“কি ভালো! তুমি কি আমার বন্ধু?” তুতুন উদ্ভাসিত হয়ে জিজ্ঞাসা করে।
-“কিন্তু সবাই তো আমায় শত্রু বলছে।” গম্ভীর গলায় একটু দুঃখের আভাস পাওয়া যায়।
-“তুমি আমার সাথে খেলবে বন্ধু? আজ ছাদে বাবার সাথে না খেলে তোমার সাথে লুকোচুরি খেলবো।”
-“কিন্তু আমি তো আর বেশিদিন থাকবো না। এই পৃথিবী থেকে আমার যাবার সময় হয়ে এসেছে। তখন তুতুন তুমি আবার স্কুলে যাবে, বন্ধুদের সাথে মাঠে খেলতে পারবে।”
-“বন্ধু তুমি কি রাগ করে আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছ?” তুতুন মনে দুঃখ নিয়ে জিজ্ঞাসা করে।
-“মানুষের কাছে থেকে দূরে বনে-জঙ্গলে চলে যাবো। কিন্তু চিন্তা নেই আমি থাকব। মানুষ বেচাল হলেই আবার ফিরবো।”
মোবাইলের নীল আলোর উজ্জ্বলতাটা কেমন কমে এসেছে। শুঁড়ওয়ালা বলটা অবয়বহীন হয়ে আস্তে আস্তে বাতাসে মিলিয়ে যাচ্ছে।
-“না খেয়ে শুয়ে পড়লি কেন?” মায়ের চিৎকারে তুতুনের স্বপ্নটা ভেঙে গেল।