শৈশব

শৈশব
লেখা : ঐশিকা সরকার
প্রচ্ছদ : নিকোলাস

গ্রামের মেঠো পথ ধরে হেঁটে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম রাস্তার ধারে দুটি ছোট ছেলে খেলা করছে। বয়স মনে হয় তিন বা চার বছর হবে। বালি আর ধুলো নিয়ে সুন্দর প্রকৃতির কোলে নিজেদের আপন মনে খেলা করেই যাচ্ছে। আমিও শীতের ঐ সোনালী রৌদ্রের আমেজে ওদের ঐ অপূর্ব বাধনহারা প্রানবন্ত খেলা উপভোগ করছিলাম। আমার পাশে এক মহিলা দাঁড়িয়ে ছিলেন। ওনার কাছে জানতে পারলাম দুটি ছেলের নাম সুমন ও সত্য।
কিছুক্ষণ পর হঠাৎ সুমন হাতটা পেছনে মুঠো করে দৌড়ে একটি দেওয়ালে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। আর পেছনে সত‍্য দৌড়ে গিয়ে ওর মুষ্টিবদ্ধ হাতটা খোলার জন্য কি প্রানপন চেষ্টা করছে। দেখে মনে হচ্ছে যেন সুমন কিছু নিয়ে আর দিতে চাইছে না। আমি ওদের কাছে গিয়ে জোরে ধমক দিয়ে সুমনকে বললাম, “তুমি সত্যর জিনিস এখুনি ফেরত দাও। কি সুন্দর খেলা করছিলে, তা না করে দেখ এখন দুস্টুমি করছ।” কিন্তু আমার কথায় ওদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নাই। সত্য যতই ওর মুষ্টি খোলার চেষ্টা করে সুমন তত হাতটা পেছনে নিয়ে দেওয়ালে সিঁটিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ দেখি সত্যর চোখ ছলছল করছে। আমি অনেকবার বলার পর সুমন বলল, “সত্য আমায় মিথ্যে বলেছে, তাই আমি ওর সাথে আড়ি নিয়েছি।” সত্য বলল, “আমি ওর সাথে ভাব নেব বলে কত চেষ্টা করছি ওর বুড়ো আঙুলটা বের করতে, কিন্তু ও আমার কোন কথা শুনছে না।”
আমি সত্যিই কিছুক্ষণ অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকলাম, তারপর হাসি আর থামাতে পারলাম না। মনে মনে বললাম এটাই হল ছেলেবেলা। কত সুন্দর মনের বহিঃপ্রকাশ। আঙুলের সাথে আঙুল মিলিয়ে আর চোখের দিকে তাকিয়ে আড়ি ও ভাব নেওয়া দিনগুলো কতই না ভালো ছিল। আর এভাবেই যদি আমাদের আঙুলের সাথে আঙুল মিলিয়ে মনের মিল করা যেত তাহলে আমাদের এই পৃথিবীটা আরো কতই না সুন্দর হত।
বাকী রাস্তা আমার ওদের ঐ শৈশবটা চোখের সামনে ভাসতে থাকল। হঠাৎ গাড়ির শব্দ মনে করিয়ে দিল আমরা আধুনিক সভ‍্যতার যুগে বাস করছি, যেখানে শৈশব এখন চার দেওয়ালে বন্দী।

Author: admin_plipi