
সোমার আজও কাজ সেরে শুতে শুতে অনেক রাত হয়ে গেল। ওর দুই মেয়ে রাধা আর রানী মায়ের জন্য অপেক্ষা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে কে জানে। সোমার স্বামী আবীর বেশিরভাগ সময়ে কাজের সূত্রে বাইরে থাকে। সোমা বিহারী পরিবারের মেয়ে, কিন্তু বাঙালি পরিবারে খুব সুন্দর করে নিজেকে মানিয়ে গুছিয়ে নিয়েছে। কাজে, পুজোতে, রান্নায়, সামাজিকতায় নিজেকে সম্পূর্ণ বাঙালি করে ফেলেছে। এক কথায় পাকা গিন্নি হয়ে গেছে।
একান্নবর্তী পরিবার আবীরদের। শ্বশুর, শাশুড়ি, দুই দেওর রাজীব আর সুভাষ, ও দুই জা ইরা আর লীলা, এই নিয়ে সোমার সংসার। সাথে নিজের স্বামী ও দুই মেয়ে তো আছেই। ইরা আর লীলা অবস্থাপন্ন বাঙালি পরিবারের উচ্চশিক্ষিত মেয়ে। ওদের দুজনেরই একটি করে ছেলে। ইরা আর লীলা বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করে। সোমার দুই দেওর সরকারি আমলা। রাতে শুতে না শুতেই ভোর, আর সেই কাক ভোরেই সোমার আবার নতুন দিন শুরু হয়। ইরা বা লীলা কেউই ছেলেদের স্কুলের বাসে তুলে দিতে পারে না। সকাল সাতটায় ওঠা ও নিজেদের তৈরী হওয়া নিয়েই ওদের সময়ের সাথে লড়াই। কখন সাড়ে আটটা বেজে যায়। হন্তদন্ত করে সোমার বানানো টিফিনটা কোনোমতে গলাধঃকরণ করেই ওরা ছোটে আটটা পঞ্চান্নর বনগাঁ লোকাল ধরতে।
সোমা ভোর পাঁচটায় উঠে উঠোন ঝাঁট দেওয়া, বাসি ঘর ঝাড়া, রাতের কিছু অবশিষ্ট বাসন থাকলে মাজা, সকলের জলখাবার করা, বাচ্চাদের টিফিন করা, ওদের ছেলেদের তাড়িয়ে তাড়িয়ে স্নান করানো, খাওয়ানো, রেডি করানো- এই করতেই হিমশিম খেয়ে যায়। তারপর ছেলেদের বাস আসে। কনভেন্ট স্কুলের বাস, সময়ে আসে সময়ে ছাড়ে। একটা মিনিট দেরি মানে হয়ে গেল সেদিনের স্কুল। ওরা বেরোলে শ্বশুর-শাশুড়ির জলখাবার, ওষুধ – সোমা এই সকাল দশটা পর্যন্ত নিজের মেয়েদের দিকে তাকাতেও পারে না। ওরাও খুব স্বাবলম্বী হয়ে গেছে। মায়ের এই কঠোর পরিশ্রম ওদের জীবন-শৈলীতে অদ্ভুত অভিযোজন এনেছে। মন মানে না সোমার, হাজার হলেও মা তো। এত কিছু করে কোন কোন দিন নিজের মেয়েদের স্কুল যেতে দেরি হয়ে যায়। তবে বাংলা স্কুল বলে এতটা অসুবিধা হয় না। দশটা চল্লিশ অবধি সময় থাকে বলে বাঁচোয়া।
সোমার ও ইচ্ছা ছিল বাড়ির দুই ছেলের মতো দুই মেয়েকেও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ায়। শাশুড়ি একটা খাঁটি কথা বলেছিলেন, “স্বামীর আয় বুঝে চাদর বিছাও। তাছাড়া মেয়েমানুষের অত আহামরি বিদ্যে লাগে না। দুটো পয়সা রাখো। বিয়ে কি ধার-কর্জ করে দেবে?” পান থেকে চুন খসলেই কথা শোনাতে ছাড়েন না সোমাকে। তবুও সোমার যেন সবসময় চেষ্টা কি করে শাশুড়ির মন জয় করা যায়।
ওর বড় মেয়ে যখন পেটে ছিল, একবার ওর খুব পাঁঠার মাংস খেতে ইচ্ছা হয়েছিল। শাশুড়ি সাফ বলে দিয়েছিলেন, “মেয়ে মানুষের অত লোভ ভাল নয়।” আবীর আর সোমার ভালোবাসার পরিণয়। কথায় কথায় শাশুড়ি সোমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতেন, “বিহারীর সাথে মিশে মিশে আমার সুন্দর ছেলেটা বিহারী হয়ে গেল রে।” সোমা চুপ করে থাকত। অজান্তে দুফোঁটা চোখের জল বেরিয়ে আসত। পুরো রান্না বান্না সোমা নিজে করত, সবাইকে শাশুড়ি নিজে হাতে পরিবেশন করতেন। সবাইকে দেওয়ার পর সোমার কপালে জুটত অবশিষ্টাংশ। সোমাকে দেখে আবীরের খুব খারাপ লাগত, কখনো কখনো আবীর মাথা গরম করে ফেলত। সোমাই বাধা দিত, বলত, “উনি হাজার হলেও মা তো, তোমার মা, আমার মা, মনে নিও না।” আবীর আর রাগ করে থাকতেও পারত না। সোমার প্রতি একটা অদ্ভুত শ্রদ্ধা মিশ্রিত ভালোবাসা আবীরের।
মনে আছে, একবার পুজোয় আবীর বাড়ির তিন বৌ এর জন্য তিনটে কাঞ্জিভরম এনেছিল। মায়ের জন্য ঢাকাই জামদানি। আবীরের ইচ্ছে ছিল সোমা কমলা রঙের উপর সবুজটা নিক। ইরা আর লীলা বৌদির জন্য আবীর হলুদের সাথে নীল আর হালকা বেগুনি’র ওপর লালের কাজ করা দুটো শাড়ি পছন্দ করে এনেছিল। সোমার বহু দিনের ইচ্ছে ছিল পলাশ রঙা একটা শাড়ির। আবীর সেই মত মাকেও বলে গেল। অফিস থেকে ইরা, লীলা ফিরে আসার পর তিন বৌকে ডেকে মা শাড়ি দিলেন, ইরা, লীলা প্রথমেই এসে কমলা আর হলুদ-নীল শাড়ি দুটো নিয়ে নিল। সোমার ভিতরটা ফেটে গেল, মুখে কিছু বলতে পারল না। আবীর এসে মা কে বলতে গেলে মা মুখের উপর বলেই দিলেন, “ওরাই তো আগে নিয়ে নিল। সারা দিন খেটে মরে, একটা শাড়িই তো নিয়েছে বাবা। তা ছাড়া সোমা এত ভালো শাড়ি দিয়ে করবে কি? থাকে তো ঘরেই, ওরা রোজ বাইরে যায়।” আবীরের মন প্রতিবাদী হতে চায়। সোমা দূর থেকে ইশারায় শান্ত করে দেয়। এই ভাবেই চলতে থাকে দিন।
এই তো কয়েক মাস হল সোমার শ্বশুর গত হলেন। শাশুড়ির শরীর ও খুব খারাপ। ব্লাড সুগার বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত। প্রেসার তো বার্ধক্যের কেশ ধূসরতার চেয়েও দ্রুত গতিতে ধাবমান। আজকাল দুই চোখেই আর ভাল দেখতে পান না। সোজা হয়ে হাঁটতেও পারেন না। সোমার শাশুড়িকে যত্নের ত্রুটি নেই। আবীর আজকাল বাইরেই থাকে বেশি। বার বার দুই ছেলেকে বলেও মায়ের ছানির অপারেশনটা করানো গেল না। সময় আজকাল একটু বেশি কম। এই হচ্ছে হবে করে প্রায় পাঁচ মাস অতিবাহিত। আবীর ফিরে আসার আগেই সোমা বলে রেখেছিল এবার অন্য কিচ্ছু না, মায়ের অপারেশন আগে। সোমা আগেই ডাক্তার এর সাথে কথা বলেই রেখেছিল। আবীর বাড়ি এলেই, অপারেশন হয়ে গেল পরের দিন। এখন উনি একটু ভাল দেখছেন। শাশুড়ি সব বোঝেন। সোমার দিকে শুধু চেয়ে থাকেন, মুখে কিছুই বলেননা।
আজ সকালে সোমাকে ডেকে ওর শাশুড়ি কাঁপা গলায় বললেন, “আমায় একটু পাঁঠার মাংস খাওয়াবে মা?” আবীর বাড়িতে নেই, রাজীব আর সুভাষ আছে। অফিসে যাওয়ার খুব তাড়া তখন ওদের, তাও গিয়ে সোমা বলল একটু কষ্ট করে এনে দিতে। সুভাষ বলে দিল যে তার সময় কোথায়? আর রাজীব স্পষ্টই বলে দিল, “সে অনেক দাম, এখন মাসের শেষে এসব হবে না, পরে একদিন হবেখন।”
সোমা দৌড়ে বেরিয়ে গেল ওই রহমত চাচার দোকানের দিকে। কিছু উটকো ছেলে বসে আড্ডা দিচ্ছে, আর যাওয়া হল না। বিকেলে আবীর আসতেই সোমা আবীর কে বলল, “একটু পাঁঠার মাংস নিয়ে এস, মা খেতে চেয়েছেন।” শাশুড়ি পাশের ঘরের থেকে সবই শুনতে পেলেন।
শাশুড়ির মনে পড়ে গেল সেই দিনের কথা, মনে পড়ে গেল সোমাকে বলা তাঁর সেই কথাগুলিও – “মেয়ে মানুষের অত লোভ ভাল নয়।” লোভ কি ছেলে বা মেয়ে বিশেষে পরিবর্তনশীল? কি জানি আজ তিনি তার জবাব পেলেন কিনা? রাত ৮টায় সোমা যখন পাঁঠার মাংসের পাতলা ঝোল দিয়ে গরম গরম ভাত নিয়ে এল, শাশুড়ির চোখে জল আর বাধা মানল না। কি জানি মানুষটার সাথেই বিদ্রোহ করে বোধহয় ঝর ঝর করে গড়িয়ে পড়ল। শুধু কাঁপা গলায় বললেন, “কবে যে তুমি আমার মেয়ে হয়ে গেছ বুঝিনি মা, আমায় ক্ষমা করে দিও।”
সোমা আজ আর সামলাতে পারল না নিজেকে। যে ভালবাসাটুকুর কাঙালি হয়ে এত বছর কেটে গেল, আজ যেন এক বাক্যে উনি সব বিলিয়ে দিলেন। শুধু বলল, “মা আজ আপনি আমাকে মেয়ে বললেও আমি যেদিন এই বাড়ি প্রথম এসেছিলাম, সেদিন থেকেই আপনাকে মা মেনে এসেছি। মেয়ে হতে বড্ড সময় নিয়ে নিলাম।”
কলমে – আরতি
ছবি – আরতি
Khub sundar, money daag kataa uchit? Lekha r chhobi thik thak.
ধন্যবাদ। পাঠকের মনে দাগ কাটলে আমার লেখা সার্থক মনে করবো।
একেবারে পারিবারিক গল্প। খুব সাধারন ভাষায় লেখা। আজকাল এমন শাশুড়ির সংখ্যা অনেক কমে এলেও সবাই এখনও মুখে মডার্ন হলেও মনে হন নি। সাথে এটাও ঠিক সোমার মতো বউমারাও কমে এসেছে। এই গল্প টি আধুনিক যুগের সব সোমা আর তাদের শাশুড়ির পড়া উচিৎ।
অনেক ধন্যবাদ । আপনার মতই একটি ইচ্ছার বশে আমার এই প্রয়াস।
আল্লাহ যেন সব শাশুড়ি দের এমন বৌমা দেন। আর সব শাশুড়ি যেন গল্পের শেষের শাশুড়ি মায়ের মত পরিবর্তিত হন।
আপনার ইচ্ছা পুর্ন হক। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
বর্তমান যুগে বৌমারা ভুলেই যান যে তারাও কারো মেয়ে ছিলেন। বিয়ের পর কি শাশুড়ি কে মা বলে মেনে নেওয়া খুব কঠিন? আমি আমার ব্যক্তিগত অভিমানের কথা রাখলাম। যদি কোনো আধুনিক বৌমারা থাকেন তারা যেন অবশ্যই এর উত্তর দেন। ঠিক তাদের কি কি সমস্যা হয়? শ্রীমতী সুচিস্মিতা সেন এর সাথে আমি একমত । আধুনিক শাশুড়ি এবং আধুনিক বৌমারা অবশ্যই একবার ভাববেন যে এই সম্পর্ক টা শুরুর আগেই তিক্ত যেন না হয়। উভয় এর ই উভয়কে সময় দেওয়া উচিত। সব শেষে লেখিকা কে বলি, আপনার লেখা টি দারুন সুন্দর হয়েছে। এমন লেখা আরো লিখুন। যাতে আধুনিকতায় নতুন মাত্রা যোগ করা যায়।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি মন্তব্য রাখার জন্য। আপনাদের ভালো লাগলেই আমার প্রয়াস সার্থক। আমি পুরো পান্ডুলিপি পরিবারকেও ধন্যবাদ জানাই এমন একটি উদ্যোগের জন্য। আপনার কথার সূত্র ধরেই বলি আধুনিকতার মানোন্নয়ন হচ্ছে পারিবারিক জীবনে এ ব্যাপারে আমি শত ভাগ নিশ্চিত। আধুনিক সম্পর্ক গুলো অনেক বেশি উদার। আমি আরো সুস্থ সামাজিক সম্পর্কের স্বপ্ন নিয়েই এই লেখাটি লিখেছি। পাঠকদের মনোগ্রাহী হলেই লেখিকার কলম সার্থক।
বেশ সুন্দর। হ্যাপি এন্ডিং।
ধন্যবাদ।
‘ মেয়ে হতে বড্ড সময় নিয়ে নিলাম। ‘ কি দারুন করে লিখেছেন শেষ লাইনটা। সুন্দর লেখা।
ধন্যবাদ। মেয়েটির মনের ভিতরের বহুদিনের জমা অভিমান প্রকাশ করাতে হবে অথচ শালীনতার সাথে। সেখান থেকেই এই লাইন উঠে এসেছে। আমার প্রচেষ্টা আপনা দের ভালো লাগলেই আমার সার্থকতা
Adbhut bhalo lekha, sobar modhye jodi ekta chhotto Somar chhaya thakto….hoyto samajta ektu annorakam hoto. Dhanyabad lekhika , golpo o chhobir jonno
678433 173599really great goodthis post deserves almost nothing hahaha merely joking: S nice write-up: P 873051
828968 314196Seriously very good contribution, I truly depend on up-dates of your stuff. 736223
958414 214935Respect to site author , some great selective info . 920248
993707 943668Its exceptional as your other posts : D, regards for posting . 791048
662269 642431I as well believe thence , perfectly pent post! . 759165
316941 400356This web site is normally a walk-through its the info you wished about this and didnt know who ought to. Glimpse here, and youll certainly discover it. 824728
385699 935460I was suggested this web internet site by my cousin. Im not confident whether this post is written by him as nobody else know such detailed about my problem. You are incredible! Thanks! 313162
620354 721485The vacation delivers on offer are : believed a selection of some of the most selected and moreover budget-friendly global. Any of these lodgings tend to be quite used along units might accented by means of pretty shoreline supplying crystal-clear turbulent waters, concurrent with the Ocean. hotels packages 628387
376764 604920There is noticeably lots of money to realize about this. I assume youve produced certain nice points in functions also. 229454
880912 152275An intriguing discussion will probably be worth comment. I believe that you can write read a lot more about this topic, may nicely surely be a taboo topic but usually folks are inadequate to chat on such topics. To a higher. Cheers 566380
797589 652163You produced some decent points there. I looked on the net for any problem and located most individuals goes in addition to with all your web site. 868086
71091 832016I agree with you. I wish I had your blogging style. 848145
832115 855845I think you did an awesome job explaining it. Positive beats having to research it on my own. Thanks 67031
280347 26801Yay google is my king helped me to locate this outstanding internet site! . 856089
564399 468941I like this web web site because so a lot utile stuff on here : D. 424335
917404 717676The electronic cigarette makes use of a battery and a small heating aspect the vaporize the e-liquid. This vapor can then be inhaled and exhaled 516001
891023 40602I enjoy what you guys are generally up too. This kind of clever work and reporting! Maintain up the quite very good works guys Ive added you guys to blogroll. 586271
978406 778092Outstanding post, I conceive folks ought to larn a great deal from this web site its actually user genial . 831240
867087 784699I believe other internet site owners really should take this web site as an example , really clean and fantastic user genial style . 79503
907614 261814I discovered your blog site web site on the search engines and check several of your early posts. Always maintain up the very good operate. I lately additional increase Rss to my MSN News Reader. Seeking for toward reading significantly far more on your part later on! 140471
682503 391276Do you have a spam problem on this website; I also am a blogger, and I was curious about your situation; we have created some nice practices and we are looking to trade techniques with other folks, be sure to shoot me an email if interested. 754120
46035 277956Merely wanna input on few common points, The web site style is perfect, the subject material is rattling superb : D. 188194
Like!! I blog quite often and I genuinely thank you for your information. The article has truly peaked my interest.
Like!! Thank you for publishing this awesome article.
608993 651340I like this web internet site its a master peace ! Glad I detected this on google . 802277
991512 864694Someone necessarily assist to make critically articles Id state. This really is the very first time I frequented your internet page and thus far? I amazed with the analysis you created to make this actual submit incredible. Excellent activity! 350327
806818 833590Intriguing, but not ideal. Are you going to write far more? 217428