টিটোদি ও রহস্যে ঘেরা কার্শিয়ং টুরিস্ট লজ [চতুর্থ পর্ব]

কলমে – সৌরভ সেন
ছবি – রূপম দে

[ আগে যা যা হয়েছে – গোয়েন্দার বেড়ানো বোধহয় এরকমই হয়। দার্জিলিং এ স্নো ফল দেখতে গিয়ে টিটোদি আর নিলু জড়িয়ে পড়ল রহস্যের জালে। কার্শিয়ং টুরিস্ট লজে লাঞ্চ করতে করতে এক ভদ্রলোক হঠাৎ মারা গেলেন বিষক্রিয়ায়। কিন্তু আশ্চর্য, ফরেনসিক রিপোর্টে ওনাদের তিনজনের গ্লাসেই বিষ পাওয়া গেল। এই রহস্যে টিটোদি নাজেহাল, তখন খবর এল আরো একটা খুনের… এরপর…? ]

পরদিন সকালে যখন নিলুর ঘুম ভাঙল তখন প্রায় পাঁচটা বেজে চল্লিশ মিনিট। এত ভোরে ঘুম ভেঙে গেল দেখে সে নিজেই অবাক হয়ে গেল। এমনিতে সে ঘুমোতেই যায় রাত দুটোয়। নিলু উঠে দেখল টিটোদি তখনও ঘুমোচ্ছে। সে উঠে সোজা চলে গেল নিচে সার্কিট হাউজের পাশের ফাঁকা জায়গাটায়। গতকাল সে সূর্যোদয়ের সময়টা দেখে রেখেছিল ইন্টারনেট ঘেঁটে। কি আশ্চর্য! ঠিক পাঁচটা পঁয়তাল্লিশেই সূর্যের দেখা মিলল। আর দেখা মিলল খুব সুন্দর কাঞ্চনজঙ্ঘার। অপূর্ব সৌন্দর্য্যে ভরা যেন কোন রাজকন্যা।

ছবি – রূপম

-“সাবজি, চায় পিয়েগা কেয়া?”
কখন হঠাৎ কেয়ারটেকার চা নিয়ে এসেছে নিলু খেয়ালই করেনি। কিছুক্ষণ পর টিটোদিও এসে যোগ ছিল।
-“কিরে কাঞ্চনজঙ্ঘা কেমন দেখলি?”
-“মাইন্ড ব্লোইং। এই বাংলোর লোকেশনটা খুব ভালো তাই এত সুন্দর দেখা যাচ্ছে।”
-“হ্যাঁ, সে তো অবশ্যই। আগেকার সাহেবরা জেনে বুঝেই সব বাংলো গুলো সুন্দর লোকেশনে বানিয়েছে। চল তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে, বেরোতে হবে।”
খুব তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে পড়ল ওরা। সকাল সাতটা, হালকা কুয়াশা রাস্তায়। একটা গান চালিয়ে দিলো টিটোদি। সেই অঞ্জন দত্তের বিখ্যাত গান “খাদের ধারের রেলিংটা… আমার শৈশবের দার্জিলিংটা” বেশ লাগছিল নিলুর। গান শুনতে শুনতে পাহাড়ী ঘর বাড়ি দেখতে দেখতে যাচ্ছিল নিলু। গান আর বাস্তবের কেমন যেন একটা অদ্ভুত মিল! ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল।

-“লেখাগুলোর কিছু মানে বুঝতে পারলে টিটোদি?” কিছু দূর গিয়ে জিজ্ঞাসা করল নিলু।
-“আপাতত কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। আরও ভেবে দেখতে হবে।”
-“কি ভাষায় লেখা সেটা বুঝতে পারছ?”
-“গবেট! ওটা কোন ভাষা নয়। কোনো কোডে লেখা।”
-“কি করে বুঝলে? তুমি কি সব ভাষা জান নাকি?”
-“তা জানি না। তবে একটু মাথা খাটালেই বোঝা যায়। আর তাছাড়া গুগল এ গিয়ে ইমেজ সার্চ করে দেখেছি ওরকম কোন ভাষা নেই এই পৃথিবীতে। অবশ্য এলিয়েনরা যদি লিখে গিয়ে থাকে তাহলে ব্যাপারটা আলাদা।”
নিলু বুঝল টিটোদি মজা করছে। তাই সে এই নিয়ে আর কথা বাড়াল না।
-“তুমি কাকে সন্দেহ করছ? মানে ওনাদের দুজনের মধ্যেই কি কেউ খুন দুটো করেছে? না তৃতীয় কেউ আছে এর মধ্যে?”
-“সেটার উত্তর পাওয়ার জন্য আরও অনেক তথ্য দরকার। যেমন ওনাদের বিজনেসের আর কে বা কারা পার্টনার আছে? নাকি ওনারা দুজনেই পার্টনার। আর ড্রাইভারকে কেনই বা খুন করতে যাবে ওরা! তাহলে বোঝাই যাচ্ছে ব্যাপারটা শুধু টাকা পয়সা রিলেটেড নয়। কিন্তু ওনারাও যে খুনি হতে পারেন এটা তোর মাথায় এল কেন?”
-“তুমি যে ওনাদেরও কল রেকর্ড চেক করতে বললে!”
-“বা! বুদ্ধি হয়েছে দেখছি। আসলে কেউই সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়।”
-“কিন্তু মিস্টার সাহা তোমাকে কেন কেসটার দায়িত্ব দেবেন? উনি নিজেই যদি অপরাধী হয়ে থাকেন? আর তাছাড়া ওনাদের গ্লাসেও তো বিষ পাওয়া গেছে। ওনারা নিজেদের গ্লাসে নিজেরা কেনই বা বিষ মেশাবেন?”
-“হতে পারে যাতে মিস্টার সাহার ওপর সন্দেহ না যায় তার জন্য উনি আমাকে কেসটা দিয়েছেন। হতে পারে ওনাদের খাওয়ার পর গ্লাসে বিষটা মেশানো হয়েছে। আর তার জন্যই মিস্টার সাহার গ্লাসে একটা হালকা জলের লেয়ার ছিল। আর সেই দেখেই আমার সন্দেহ হয়, তাই আমি সব খাবারগুলো পরীক্ষা করতে বলি। সি.সি.টি.ভি. ফুটেজে দেখলেই এই ব্যাপারটা ক্লিয়ার হয়ে যাবে।”
-“আর মিস্টার সাহা ওরকম চিঠি কোথা থেকে পেলেন?”
-“হ্যাঁ। ভালো ধরেছিস। এই ব্যাপারটাই আমার অরিজিনাল বলে মনে হয়েছে। ওরকম কোড দেওয়া চিঠি ওনার পক্ষে অন্তত লেখা সম্ভব নয় বলেই মনে হয়েছে আমার। ওনার অত শার্প ব্রেইন বলে তো মনে হল না। মনে হচ্ছে এক্ষেত্রে উনি সত্যিই বলছেন।”
-“তাহলে ওনাকে সন্দেহের তালিকার থেকে বাদ দিচ্ছ?”
-“এখনি নয়। সব কিছু কেমন যেন গোলমাল পাকিয়ে যাচ্ছে বুঝলি?”
-“টিটোদি তোমার বন্ধুটিকে জানিয়ে দিয়েছ যে আমরা ফিরে যাচ্ছি? ওনার যে কেভেন্টারর্সে আসার কথা ছিল আজ?”
-“হ্যাঁ, ভালো কথা মনে করিয়েছিস, এখন‌ই জানিয়ে দিচ্ছি।”
যেতে যেতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল নিলু খেয়ালই নেই! চোখ খুলল টিটোদির ডাকে।
-“কিরে কুম্ভকর্ণ, ওঠ।”
-“ওহ্! পৌঁছে গেছি!” আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে জিজ্ঞেস করল নিলু।
-“হ্যাঁ। এবার বেরিয়ে আয়।”

নিলু দেখল একটা ছোট্ট ঘর। দেয়ালগুলো টিনের আর মেঝেটা কংক্রিটের। টিনের চাল গুলো লাল নীল রং দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো। আর খুব সুন্দর সুন্দর রংবেরঙের ফুল ফুটে রয়েছে টবে।
-“মিস্টার সাহা, আপনার ড্রাইভার কোন ঘরটায় খুন হয় বলুন তো?”
-“এই তো, চলুন নিয়ে যাচ্ছি ম্যাডাম। আমি আর আমার বউ দুজনেই খুব ভীত। পরপর দুটো খুন! আমাদের কোনও বিপদ হবে না তো?”
প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে টিটোদি জানতে চাইল, “বডি কি পোস্টমর্টেমে চলে গেছে?”
-“হ্যাঁ চলে গেছে।”
ঘরটা বাইরে থেকে ভালো করে পরীক্ষা করল টিটোদি।
জানালার কাঁচ ভাঙ্গা। ভাঙ্গা কাঁচ দেখিয়ে মিস্টার সাহা বললেন, “এই দিক দিয়ে মনে হয় এসেছিল খুনি।”
-“তো কাঁচ ভাঙ্গার শব্দ পেল না আপনার ড্রাইভার?”
-“ও তো নেশা করে ঘুমচ্ছিল। এই শব্দ ওর কানে যাওয়ার কথা নয়।”
-“ঠিক আছে চলুন, ঘরের ভেতরটা একবার দেখি।”
ঘরের ভেতরটা ভালো করে পরীক্ষা করে দেখল টিটোদি। তার কপালে পরিচিত সেই তিনটে বেশ গাঢ় ভাঁজ দেখা গেল। বেশ চিন্তিত বোঝা গেল।
-“আচ্ছা খুনটা প্রথম কে দেখে?”
-“আমার স্ত্রী। কাঁচ ভাঙার শব্দ শুনে গিয়ে দেখে জানালার কাঁচ ভাঙ্গা। তখন সে আমাকে ডেকে আনে। আমিই পুলিসে খবর দিই।”
টিটোদিকে বেশ গম্ভীর দেখাল। টিটোদির মুখের এরকম ছবি বেশ ভালো করে চেনে নিলু। কিছু একটা হিসেব মেলাতে পারছে না টিটোদি।
-“আপনাদের আর ড্রাইভারের ঘর তো দেখছি পাশাপাশি। আপনারা শব্দ পেলেন না?”
-“তখন ঘরে গান চলছিল খুব জোরে।”
-“আপনি গান শুনছিলেন?”
-“না, আমার স্ত্রী শুনছিল।”
-“বললেন যে আপনার স্ত্রী শব্দ পেয়ে ডাকে আপনাকে?”
-“হ্যাঁ। একটু বাথরুম করতে বাইরে গিয়েছিল ও সেই সময়।”
কথাবার্তার মাঝেই কিছুক্ষণ পর ওসি সাহেব এসে হাজির হলেন।
-“কি ম্যাডাম? কি বুঝলেন?”
-“বোঝার চেষ্টা করছি! আচ্ছা ওসি সাহেব, আপনারা যখন ঘরে ঢুকলেন, তখন ঘরের দরজা কি বন্ধ ছিল ভেতর থেকে?”
-“বন্ধ ছিল কিনা সে তো লক্ষ্য করি নি।”
-“একটু ভেবে বলুন।”
-“আরে হ্যাঁ। দরজা তো খোলাই ছিল। বাইরে থেকে আটকানো ছিল।” অনেক ভেবে ওসি সাহেব উত্তরটা দিলেন।
-“ওকে।” টিটোদির ঠোঁটের কোনে হালকা হাসি দেখা গেল। একটা তৃপ্তির আনন্দ চোখে মুখে ফুটে উঠল।
-“মিস্টার সাহা, আপনাকে আরও কিছু জিজ্ঞাসা করার ছিল।”
-“হ্যাঁ বলুন।”
-“মিস্টার দাস কি আপনার পার্টনার ছিলেন?”
-“হ্যাঁ, বলতে পারেন।”
-“কতদিন থেকে?”
-“তা হবে প্রায় আট মাস।”
-“আপনারা টোটাল কতজন পার্টনার?”
-“এই তো, আমরা দুজন আর আমার ভাই। আসলে আমি আর আমার ভাইই চালাতাম। হঠাৎ অনেক টাকা আটকে গেল মার্কেটে। তারপর পার্টনার পেয়ে গেলাম সুকোমলকে।”
-“তা সুকোমলবাবুকে কেমন মনে হত আপনার?”
-“এমনিতে ভালো, তবে ব্যবসার প্রতি সেরকম আগ্রহ ছিল না তার। যদিও অনেক টাকা দিয়ে হেল্প করেছিল ব্যবসায়। তারপর আস্তে আস্তে ব্যবসা ভালো হয়। খুব একটা খারাপ লাভ হয়নি ওর। আস্তে আস্তে আমার বাড়ির সাথেও একটা ভালো সম্পর্ক হয়ে যায়।”
-“আপনাদের বিয়ে কত দিনের?”
-“দেড় বছর।”
-“নিজেরা দেখে শুনে?”
-“না না! বাড়ি থেকে ঠিক করে দিয়েছিল।”
-“আপনার শ্বশুর বাড়ি কোথায়?”
-“শিলিগুড়িতে। আমাদের বাড়ির কাছেই ওদের ফ্ল্যাট, আশ্রমপাড়াতে।”
-“আপনারা তিনজন কি ব্যবসায় সমান অংশীদার?”
-“হ্যাঁ।”
-“আপনাদের ব্যবসা করতে গিয়ে কি কারো সাথে শত্রুতা হয়েছিল কখনো?”
-“দেখুন ব্যবসা করতে গিয়ে শত্রুতা তো হয়েই থাকে। তবে তার জন্য আমরা খুন হয়ে যাব, বোধ করি এতটাও শত্রুতা হয় নি কারো সাথে।”
-“আচ্ছা আপনার স্ত্রীর নামে কি কোন প্রপার্টি আছে?”
-“না, সেরকম নেই।”
-“ঠিক আছে। আপনার স্ত্রীর ভালো নাম কি?”
-“দেবলীনা সেন।”
-“বাবার নাম?”
-“কমল সেন।”
– “বয়স?”
-“২৮ বছর।”
-“ঠিক আছে, আপনার ভাই এর সাথে একবার কথা বলতে চাই। পরে আপনাদের বাড়িতে যাব। আজ চলি। আপনি একটু আপনার ড্রাইভার, আপনার বন্ধু, আপনার স্ত্রী আর আপনার ভাই এর টেলিফোন নম্বরগুলো আমায় দিন।”
-“লিখে দিচ্ছি ম্যাডাম।”
একটা কাগজে সব নম্বরগুলো লিখে দিয়ে মিস্টার সাহা বললেন, “ম্যাডাম আজ রাতে আপনাদের সবার ডিনারের আমন্ত্রণ রইল কার্শিয়ং টুরিস্ট লজে, ওসি সাহেব আপনার একটু সময় হলে আপনিও আসবেন।”
-“না, আমার একটু কাজ আছে।” ওসি সাহেব জানিয়ে দিলেন।
-“মিস্টার সাহা, আজ থাক। আজ আমাদের একটু শিলিগুড়ি যেতে হবে, কাল ফিরব। কাল আপনার সাথে ডিনার করব।” টিটোদি বলে উঠল।
বাড়ির মালিকের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে টিটোদি আর নিলু ওসি সাহেবের সাথে থানায় গিয়ে হাজির হল। ততক্ষণে ময়না তদন্তের রিপোর্টও চলে এসেছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট জানাল শ্বাসরোধ হয়েই মৃত্যু। মুখ এবং নাক চেপে ধরার চেষ্টা হয়েছিল বলপূর্বক। তারপর টিটোদি প্লেস অফ অকারেন্স থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া জিনিসের লিস্টটা ওসি সাহেবের থেকে চেয়ে নিল। বাজেয়াপ্ত হওয়া জিনিসের মধ্যে ছিল মুখে গোঁজা কাপড়, একটা পুরোনো মডেলের নোকিয়া ১০১০ ফোন ইত্যাদি। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, একটি ডায়েরি। টিটোদি ডায়েরিটা ফটো কপি করিয়ে নিল। নিলুকে থানায় বসিয়ে টিটোদি সারাদিন এদিক ওদিক করে বেড়াল।

দুপুর বেলায় সি.সি.টি.ভি. ফুটেজ দেখার জন্য টুরিস্ট লজে এসে হাজির হল টিটোদি আর নিলু। প্রায় ৩ ঘণ্টা দেখার পর নিলু বলল, “আশ্চর্য! ফুটেজে তো কিছুই নেই! খাবারে বিষ কখন কে মেশাল কিছুই বোঝা গেল না।”
টিটোদিকেও বেশ চিন্তিত দেখাল।
বিকেলের দিকে শিলিগুড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হল নিলু আর টিটোদি। ওসি সাহেব খামে করে সব নম্বরগুলোর কল লিস্ট দিয়ে দিলেন। গাড়িতে যেতে যেতে সেগুলো ভালো করে পরীক্ষা করে দেখল টিটোদি, সারা রাস্তা বিশেষ কিছু কথাই বলল না টিটোদি। কল লিস্টগুলো যে টিটোদির মনঃপুত হয় নি সেটা বেশ ভালই বোঝা গেল। নিলু একবার জিজ্ঞাস করলো, “মিসেস সাহার সম্পর্কে এতো খোঁজ কেন নিলে তুমি?”
-“সবই যদি তুই বুঝে যেতিস, তাহলে তোর আর টিটোদির মধ্যে তফাৎটা কোথায় থাকত?”
নিলু মনে মনে ভাবল ভাগ্যিস সে সব কিছু বোঝে না! এই হেল্পার হিসেবেই দিব্বি আছে সে। এতো ঝামেলা নেওয়ার কোনও ইচ্ছেই তার নেই।
-“খাবারে বিষ কে মেশাল টিটোদি? ওয়েটার ছাড়া তো আর কেউ আসে নি টেবিলে?”
-“ওয়েটারও অনেক আগে এসেছিল! ওয়েটার মিশিয়ে থাকলে অতো দেরি করে এফেক্ট হওয়ার কথা নয়।”
-“তাহলে?”
-“টেবিলের তিনজনের বাইরে কারো পক্ষে মেশানো খুব মুস্কিল। কিন্তু ওই তিনজনকেও তো মেশাতে দেখা গেলো না। একমাত্র মিসেস সাহা ক্যামেরার দিকে পেছন ফিরে বসেছিলেন। সেই ক্ষেত্রে ওনার সমস্ত এক্টিভিটি দেখা সম্ভব নয় ঠিকই, কিন্তু ওনাকেও তো নিজের গ্লাস ছাড়া বাকি কোন গ্লাসের দিকে হাত দিতেই দেখা যায় নি।”
টিটোদিকে সারা রাস্তা বেশ চিন্তিত দেখাল। সমাধান সূত্র খোঁজার চেষ্টা করছে বোঝা গেল। রিয়েল লাইফের ইকুয়েশনগুলো যে পরীক্ষায় করা অঙ্কের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন সেটা আর কজন বোঝে!
ঘরে এসে একটু ফ্রেশ হয়ে ল্যাপটপ খুলে বসে পড়ল টিটোদি। টিটোদির কাজে যে অসম্ভব রকমের মনোযোগ সেই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। নইলে এতটা পথ জার্নি করে এসে কেউ ল্যাপটপ খুলে বসে! নিলু দেখল টিটোদি সকালের নেওয়া নম্বরগুলো ফেসবুকে সার্চ করছে।
-“এভাবে ফেসবুকে নম্বর দিয়ে সার্চ করা যায় নাকি টিটোদি?”
-“সারাদিন মোবাইল নিয়ে কি করিস তুই? এই সামান্য ব্যাপারটুকুও জানিস না!”
নিলু একটু রেগে গম্ভীর হয়ে রইল। টিটো দি কিছুক্ষণ পর বলল, “কোন লাভ হল না বুঝলি? শুধু ড্রাইভারের নম্বর এই ফেসবুক প্রোফাইলে পাওয়া গেল। এবার তোকে একটা কাজ করতে হবে।”
-“কি কাজ?”
-“ইলেকশন কমিশন অফ ইন্ডিয়ার ওয়েবসাইটে ঢোক। তারপর মিসেস সাহার নাম আর ওনার বাবার নাম দিয়ে সার্চ কর। আমি কয়েকটা ফোন করে নিই।” এবার নিলু বুঝল টিটোদি কেন ইনফরমেশনগুলো নিয়েছিল। ফোন সেরে টিটোদি যখন পাশের ঘর থেকে ফিরল তখন নিলু বলল, “ওই নামে অনেক লোক আছে।”
-“সে তো থাকবেই। শুধু দার্জিলিং আর জলপাইগুড়ি জেলারগুলো দেখ, আর বয়সটাও দেখবি।”
-“শুধু একজনই আছে যার বাবার নাম, বয়স সব মিলে যাচ্ছে। সে জলপাইগুড়ি জেলার মাল ব্লকের বাসিন্দা।”
-“গুড। কিছুটা আশার আলো দেখতে পেলাম এবার। একটা প্রিন্ট আউট দে, সব ইনফরমেশন সমেত।” টিটোদিকে বেশ উত্তেজিত দেখাল।
-“আর এই কোড গুলো নিয়ে বস তো এবার।” চিঠি গুলো এগিয়ে দিলো টিটোদি। লেখার ধরন দেখে মনে হল ছোট ছোট সেন্টেন্স টাইপ লেখা। সব চিঠিগুলো পড়ে বোঝা গেল কিছু সিলেক্টেড অক্ষরই আছে বারে বারে।
-“সব অক্ষর গুলোর মধ্যে কি কমন বল?”
-“সবগুলো অক্ষর সোজা লাইন দিয়ে তৈরি কোন আঁকাবাঁকা কিছু নেই।”
-“এক্সেলেন্ট। একটু স্পেসিফিক বলতে গেলে, , এই সব দিয়েই তৈরি, অর্থাৎ ২টো থেকে ৪টে একদম সোজা লাইন দিয়ে তৈরি প্রতিটা অক্ষর। এরকম মোট নয় রকম অক্ষর আছে। আর তার সাথে ১,২,৩ মোট তিনটি সংখ্যা আছে। এবার একটা খাতা পেন নিয়ে আয় যা।”
খাতা পেন নিয়ে নানা রকম আঁকি বুকি কেটে চলল টিটোদি। প্রায় আধ ঘণ্টা পর হতাশ হয়ে উঠে জল খেতে গেল টিটোদি। টেবিলের ওপর রাখা একটা নোংরা কাগজ হাতে নিয়ে চেঁচিয়ে উঠল টিটোদি, “ইউরেকা, ইউরেকা!” আসলে এরকম পাজল সমাধান করার আনন্দটা আর্কিমিডিসের সেই রাজার সোনার মুকুটে খাদ আবিষ্কারের চেয়ে কম কিসের! খাতায় একটা চার্ট আঁকল টিটোদি ।

খাতায় একটা চার্ট আঁকল টিটোদি 

[the_ad_placement id=”after-content”]

-“এবার দেখ মজা।

এর মানে কি বল?”
প্রথমটায় নিলু ঠিক বুঝতেই পারেনি কোডের মানে।
-“ভালো করে দেখ, এখানে টোটাল নয় রকম শেপ আছে। প্রতি তিনটে অক্ষরের জন্য এক রকম করে শেপ। এরকম মোট আটটি শেপ আর শেষের দুটো অক্ষর অর্থাৎ Y, Z এর জন্য আরও একটি শেপ।”
এভাবে নয় রকমের শেপ আঁকার পর নিলু সবটা বুঝতে পারল। প্রতিটা শেপ আর তার পরের সংখ্যা দিয়েই এক একটা অক্ষর তৈরি করা হয়েছে।
-“বুঝতেই পারছিস, যার কাছে এই চার্ট থাকবে শুধু সেই এর মানে বুঝতে পারবে। এবার বল তোকে যে প্রশ্নটা করলাম সেই কোডের মানে কি?”
-“আইনক্স!” নিজের অজান্তেই মুখ থেকে বেরিয়ে এল নিলুর।
-“তুমি চার্টটা আঁকলে কি করে?” নিলু অবাক হয়ে জানতে চাইল।
-“এর ফুল ক্রেডিট অবশ্য তোকেই দিতে হয়।”
-“আমাকে!” নিলু যেন আকাশ থেকে পড়ল।
-“এই যে তোর কাটাকুটি খেলার চার্ট। এটা দেখেই তো ছকটা মাথায় এল।” নোংরা কাগজটা এগিয়ে দিয়ে বলল টিটোদি। কাটাকুটি খেলার এরকম একটা নোংরা চার্ট ও যে রহস্যের সমাধান এনে দিতে পারে সেটা কে জানত! একটা কথা আছে না “যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পার অমূল্য রতন…।” এই কথাটা অন্তত এখানে অবশ্যই প্রযোজ্য। নিলু অবাক হয়ে ভাবল এটা। এবার সমস্ত চিঠিগুলো নিয়ে একই ভাবে সবগুলোর মানে লিখতে শুরু করল টিটোদি। সবগুলো চিঠি খুব সংক্ষিপ্ত। শুধু কিছু জায়গার নাম উদ্ধার করা গেল। যেমন দুধীয়া, সেবক এই সব। সব জায়গাগুলোই শিলিগুড়ির একদম আশেপাশে, মাত্র ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টার রাস্তায়।
-“কি বুঝলি এবার নিলু ?”
-“এই চিঠি দিয়ে শুধু গোপনে দেখা করার জায়গা ঠিক করা হ’ত।”
-“কারা দেখা করত?”
-“কেউ এক জন আর সুকোমল বাবু?”
-“গুড। তবে এটা একটা পসিবিলিটি হলেও এমনও তো হতে পারে, অন্য কারোর চিঠি সুকোমল বাবুর ফাইলে ছিল! এখনি কোনও সিদ্ধান্তে আসা ঠিক হবে না।”
কথাবার্তার মাঝে হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠল।
-“এখন আবার কে এল রে? দেখ তো নিলু!”

চলবে…

অন্যান্য  পর্ব পড়ুন এখানে –
১) প্রথম পর্ব  https://pandulipi.net/titodi-rahasyo-01/
২) দ্বিতীয় পর্ব https://pandulipi.net/titodi-rahasyo-02
৩) তৃতীয় পর্ব   https://pandulipi.net/titodi-rahasyo-03/
৪) চতুর্থ পর্ব   https://pandulipi.net/titodi-rahasyo-04/
৫) পঞ্চম ও শেষ পর্ব  https://pandulipi.net/titodi-rahasyo-05/
[ www.pandulipi.net is a one of a kind web portal where readers can spend few time to read Bengali short  story / Bengali poem / Bengali travelogue / Bengali articles / Bengali series / Bengali Thriller / Bengali Detective story  etc. everything complemented with some beautiful photographs or illustrations etc. therefore not only literature www.pandulipi.net also showcases the wide arena of photography and art. Not only Bengali but  www.pandulipi.net also publishes English short  story / English poem / English travelogue / English articles / English series / English Thriller / English Detective story. Remember we have best Bengali short story and English short story in our kitty.Because we believe every story should have its own photograph as well as every photograph has a story to tell. We at www.pandulipi.net thrive to build a link between them.Viewers can read our about us segment https://pandulipi.net/about-us/ ‎ for more details.One more thing to tell that readers can also get in touch with us to get their literary or photography works get published in www.pandulipi.net to showcase their passion to the world. Contact details can be availed at https://pandulipi.net/contact-us/ ‎ ]

Author: admin_plipi