লেখা ও ছবি – দেব হোর
বিচিত্র এই পৃথিবীর অনেক বৈচিত্র্যের মধ্যে মানুষই সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ। এই বিচিত্রতার মধ্যেই আমি সেই অপরূপের দর্শন পাই। শৈশবের ধারনা ছিল অপরূপ অন্য কোথাও লুক্কায়িত আছে। যৌবনেই সেই ভুল ভেঙ্গেছে। মানুষের একাকিত্বের অনুভব যত গভীরে, আনন্দের তীব্রতা তত বেশি। মানুষের এই অনুভবক্ষণে সে বড় একলা।
মানুষের এই একাকী মুহূর্তেই তার ঘরবাঁধা মন মানুষের হাটের মাঝেও হারিয়ে যায়। তখন সে আর ঘরের নয় পরের। এই অনুভূতি যখন এক ফাঁকে মনের দরজা খুলে ছড়িয়ে পড়ে রক্তকোষে, চারিয়ে যায় শরীরে, তখন আমরা সেই হাট করে খোলা মনটি নিয়ে স্বশরীরেই যাই মেলায়, পথে ঘাটে মাঠে, দশজনের মিছিলে। কখনো ভয়ে পিছিয়ে আসি, আবার কখনো ঝাঁপ দিই সাহসে বুক বেঁধে।
যখন কোন নিঃশব্দ নিরালা মুহূর্তে বিস্ময়ে বেদনায় আনন্দে লক্ষ্য করেছি, প্রসন্ন সময়ে আবির্ভাব ঘটেছে আমার সামনে, তখনই অবাক হয়ে দেখেছি, সে আর কেউই নয় মানুষ! তাকে ছাড়িয়ে কোন অপরূপের দর্শন আমার ঘটল না। তাই ফিরেছি তারই দরজায় প্রণত মস্তকে। আর যাকে এখনো দেখতেও পাই না, চিনতেও পারি না, সে তো আমার ভিতরে অন্ধকারেই ঢাকা রয়েছে। সেখানে আলো কোনদিন পড়বে কিনা জানিনা।
আর একে খুঁজতেই বেরিয়ে পড়া বারবার। ক্যামেরাটা তো একটা নিছক সহায়ক গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র আর ফোটোগ্রাফিটা একটা অজুহাত সংসারী লোকেদের ভেতরের ভবঘুরে নামক পাগলটাকে বাঁচিয়ে রাখার রসদ সরবরাহের জন্য।
যদি হয় সুজন তেঁতুল পাতায় ন’জন। যাই হোক আমরা সাত জন, ভাই/বন্ধু বিনা কলহেই গিয়ে গত বর্ষায় বেড়িয়ে এসেছিলাম মেঘবালিকার দেশে, সাত বোনেদের ডেরায়। মেঘ দেখতে দেখতে মেঘেদের আলয় অবধি ধাওয়া করে এলাম। হ্যাঁ, যে মেঘ আমরা আকাশে দেখতে অভ্যস্ত, সেই কচি কচি থোপা থোপা মেঘেদের সাথে কোলাকুলি করে, কুলকুচি করে, গড়াগড়ি-হুড়োহুড়ি করে কাটিয়ে এলাম কয়দিন। রবীন্দ্রনাথের ‘মেঘালয়’ নামকরনের সার্থকতা চাক্ষুষ করলাম।
আসলে আমার প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল অরুনাচলকে নিয়ে, পরে সেটারই বর্তমান পরিবর্তিত রূপ মেঘালয় যাত্রা। তবে আঁচলের পরিবর্তে আলয়ের আতিথেয়তা কোন অংশে কম তো নয়ই বরং অনেক বেশি উপভোগ্য। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে সাতসকালে গৌহাটি পৌঁছে রেল ক্যান্টিনে ধোসা ও বড়া, অবশেষে চা-কফি সহযোগে প্রত্যাশা মত প্রাতরাশ সেরে শিলং পাহাড়ে যাবার প্রস্তুতি নিলাম।
অমিতের শিলং, লাবণ্যর শিলং, রবীন্দ্রনাথের শিলং ‘শেষের কবিতার’ শিলং, প্রেমময় যৌবনের অপ্রাপ্ত প্রেমের শিলং, উত্তেজনায় এক রোমাঞ্চকর অনুভূতির শিলং।
“পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি,
আমরা দুজন চলতি হাওয়ার পন্থী।
রঙিন নিমেষ ধূলার দুলাল
পরাণে ছড়ায় আবীর গুলাল,
ওড়না ওড়ায় বর্ষার মেঘে
দিগঙ্গনার নৃত্য,
হঠাৎ-আলোর ঝলকানি লেগে
ঝলমল করে চিত্ত।
নাই আমাদের কনকচাঁপার কুঞ্জ,
বনবীথিকায় কীর্ণ বকুলপুঞ্জ।
হঠাৎ কখন সন্ধ্যাবেলায়
নামহারা ফুল গন্ধ এলায়
প্রভাতবেলায় হেলাভরে করে
অরুণকিরণে তুচ্ছ
উদ্ধত যত শাখার শিখরে
রডোডেন্ড্রন্ গুচ্ছ।”
রবীন্দ্রনাথের কবিতা যেন সারাটা পথ কানের মধ্যে বাজতে লাগল। এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই কখন দেখি গৌহাটি শহর পার করে কাজিরাঙ্গার পাশ দিয়ে নওগাঁর রাস্তাকে পাশে রেখে আমাদের গাড়ি সোজা মেঘালয় এর পথ ধরেছে । একটু এগোতেই দল বেঁধে মেঘেরা এসে আমাদের সাত সহযাত্রীকে ওয়েলকাম করল, “ইউ সেভেন ব্রাদার্স আর ওয়েলকাম টু আওয়ার সেভেন সিস্টার্স স্টেটস।”
অপূর্ব রাস্তার আঁকবাঁক, খাঁজ- প্রতিটি বাঁকেই যেন চমক অপেক্ষা করে আছে। কোথাও সবুজে ঘেরা রাস্তার পাশের ঝর্নায় লাল প্যান্ট পরা পাহাড়ী ছেলে লাল টুকটুকে বালতি নিয়ে জল নিচ্ছে আবার কোনো বাঁকের শেষে পাহাড়ের ঢালে মেখলা পড়া পাহাড়ী বালা পানখাওয়া লাল টুকটুকে অমায়িক হাসিমাখা ঠোঁট নিয়ে, ক্ষেতের তাজা শব্জী, পাকা টুকটুকে হলুদ আনারস দিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেছে। কোন পাহাড়ের ঢালে হয়তো চাষী পাহাড়ের ধাপ কেটে হেমন্তী ধানের চাষের আয়োজনে ব্যস্ত। এমনি করেই তিন ঘন্টা কিভাবে কেটে যায় খেয়ালই থাকেনা। হঠাৎই একসময় সম্বিত ফেরে বিশাল বড় এক লেকের পাশ দিয়ে যাবার সময়। ‘উমিয়াম লেক’ বা স্থানীয় ভাষায় বড়া পানি লেক। শিলং শহরের উপকন্ঠে এক অতি রমণীয়, দর্শনীয় ও অবসর যাপনের আদর্শ স্থান। শহরে ঢোকার মুখেই স্টার্টার হিসেবে এর দর্শনের আনন্দ আত্মীকরন করা যায়।
আর এই লেকের সামনের সারিবদ্ধ বৈচিত্র্যময় স্ট্রিটফুড স্টল যেন এটাকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এসবের মধ্যে রোস্টেড সুইট বেবিকর্ন আর চারকোল রোস্টেড স্মোকি এ্যান্ড জুসি পর্ক অসাধারণ সুস্বাদু। খাদ্যাভ্যাসে ছুৎমার্গ না থাকলে অবশ্যই পরীক্ষণীয়।
একটু বেশি সকালেই পৌঁছে গেলাম শিলং। অধিকাংশ হোটেলেই আগের দিনের অতিথিরা সব রয়ে গেছেন, তাই ঘর পেতে একটু অপেক্ষা করতে হল। যাই হোক, রুম পেয়ে চা, প্রাতরাশ সেরেই বেরিয়ে পড়লাম শহর পরিদর্শনে।
এলিফ্যান্ট ফলস্, হিল পিক ভিউ, বড়া পানি
শহরের ১০ কিমি দুরে ৬৪৪৯ ফুট উচ্চতায় মিলিটারি বেসের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় হিল পিক ভিউ পয়েন্ট। আহামরি খুব একটা ছিল না। বরং যানজটের পাল্লায় পড়ে অনেক সময় লেগে গেল। সময়ের প্রেক্ষিতে প্রাপ্তি নগন্য। তবে যাতায়াতের পথে বিক্রির উদ্দেশ্যে স্থানীয় মহিলাদের গার্ডেন ফ্রেশ সব্জীর প্রদর্শনী খুব আকর্ষণীয় লেগেছে। সেই বর্ষায় নতুন আলু, মূলো, টকটকে লাল লঙ্কা, গাজর, রাইশাক, স্পিনাচ… যেন এক ঝলক তাজা বাতাসের মত। আর পর্যটকদের পৌরাণিক যোদ্ধার পোশাক পরে ছবি তোলার দৃশ্য বেশ মনোরম।
মেঘালয় রাজ্যের ছোট বড় মাঝারি বিভিন্ন মাপের এবং দূরত্বের ঝর্না শিলং শহরটাকে একটা আইকনিক পরিচয় দিয়েছে। শহরের উপকন্ঠে এরকমই এলিফ্যান্ট ফলস্। আবার এই ঝর্নাগুলোর সম্মিলিত প্রয়াসে তৈরি হয়েছে উমিয়াম বা বড়া পানি লেক। অদ্ভুত এক অবসর যাপনের আয়েশী ব্যবস্থা।
শিলং শহর থেকে ১২কিমি দুরে শিলং পিকের একই রাস্তায় এলিফ্যান্ট ফলস্। একটাই ফলস্ তিনটি স্টেপে নিচের দিকে নেমে গেছে। তবে নিচের ফলসটিই সবচেয়ে সুন্দর। ফলসের বর্তমান দৃষ্ট রূপটি শুরুতে ছিল না। ১৮৯৭ সনে ভয়ংকর ভুমিকম্পের ফলে এর রূপ পরিবর্তিত হয়, তার পর তৎকালীন ব্রিটিশ শাসক এর নতুন নামকরন করেন। স্থানীয়দের ভাষায় এর নাম ‘কা কাসিড লাই পাটেঙ্গ খোশিউ’ অর্থাৎ তিন ধাপের ওয়াটার ফলস।
লিভিং রুটব্রীজ ও ডাউকি দ্যা ট্রান্সপারেন্ট রিভার
শিলং যাবার আগে সবচেয়ে বড় আকর্ষন যেটা ছিল সেটা হচ্ছে মাওলিনং ভিলেজের লিভিং রুট ব্রিজ ও ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে স্বচ্ছ ডাউকি নদী।
একটা সাধারণ আইডিয়া কি করে লক্ষ মানুষের জীবন পরিবর্তন করে ইতিহাসের পাতায় গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান করতে পারে লিভিং রুট আর পরিচ্ছন্ন মাওলিনং গ্রাম তার একটা জলজ্যান্ত প্রমান। একসময় ‘মাওলিনং’ অবহেলিত নর্থ ইস্টার্ন স্টেটের অখ্যাত এক অবহেলিত গ্রাম ছিল। শতবর্ষাধিক পূর্বের কোন এক সময় স্থানীয় ডাউকি নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা নিজেদের প্রয়োজনে নদীর তীরের গাছেদের শেকড় ঝুরি জুড়ে দিয়েছিল সাময়িক যোগাযোগের প্রয়োজন মেটাতে। তারপরের সব কিছুই আমাদের চোখের সামনে। বর্তমানে এই রুট ব্রিজ এবং পার্শ্ববর্তী গ্রাম মাওলিনং লক্ষ পর্যটকদের আকর্ষণ করে নিজেদের তথা রাজ্য ও দেশকে উপার্জনের পথ দেখিয়েছে।
বর্ষায় পলিমাটির আধিক্যে নদীর স্বচ্ছতা হারানোয় ডাউকির স্ফটিকসম স্বচ্ছতা চাক্ষুষ করতে না পারার দুঃখটা ফেরার পথে গ্রামের স্থানীয় ‘কং’ পরিচালিত রেস্টুরেন্টে চিকেন ভাতে কিছুটা হলেও ভোলা গেছে, আহা অপূর্ব।
স্থানীয় ভাষায় ‘কং’ মানে দিদি, যেটা খুব সম্মানীয় সম্বোধন। মদের দোকান, ট্র্যাভেলিং এজেন্সি থেকে ফুটপাথের ফাস্টফুড রেস্তোরাঁ সবেতেই এই সদাহাস্যময় ‘কং’এর উপস্থিতি। আর বিদেশিদের মুখে কং সম্বোধন হাসির প্রশস্ততা আরো বাড়িয়ে দেয়।
আমরা যে সমাজে বেড়ে উঠেছি সেটা হচ্ছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। মেঘালয়ে ঠিক এর বিপরীত, মহিলাতান্ত্রিক সমাজ। যেখানে মহিলারা পুরুষদের বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে আসে। মহিলাদের মালিকানায় সম্পত্তির অধিকার হস্তান্তর হয়। অর্থনৈতিক চাবিকাঠি মহিলাদের হাতেই ঘোরাফেরা করে।
মেঘালয়ে মূলত তিন ধরনের ট্রাইব আছে- খাশিয়া, জয়ন্তিয়া আর গারো। এঁরা মূলত মঙ্গোলীয় ও টিবেটো-বার্মন জনগোষ্ঠীর। এঁরা মন-খামের ভাষা ব্যবহারের পাশাপাশি পিনার-সিনটেং, হ্যাজং, অ্যাসামিজ, নেপালী ও বাংলা ভাষা ব্যবহার করে।
পার্শ্ববর্তী রাজ্য আসাম, মনিপুর বা নাগাল্যান্ডের মত এঁদের নিজস্ব কোন বয়ন শৈলী না থাকলেও খাসী মহিলাদের পোশাকের একটা নিজস্বতা আছে, এবং সেটা খুব সুন্দর। পোশাকের উপরে আড়াআড়ি ঘাড়ের উপর গিঁট দেওয়া বিভিন্ন রঙের এক কাপড়খন্ড যেটা দেখতে অনেকটা এ্যাপ্রনের মতো। মেঘালয় এর রাস্তার ধারে সাজানো গোছানো ‘কং’দের দোকান প্রচুর। দোকানগুলোতে কাঠের ও বাঁশের তৈরি বিভিন্ন শো পিস ছাড়াও বিভিন্ন সময়ের মরশুমি ফল, দারুচিনি, আচার, চটপটি বড়ি, চিপস্, কুরকুরে,… কি নেই? তবে বিশেষত্ব হচ্ছে দোকানের পারিপাট্য, দেখার মত।
মাওলিনং দ্যা ক্লিনেস্ট ভিলেজ, এন্ড লিভিং স্টোন অর ব্যালেন্সিং রক
মোদিজীর স্বচ্ছ ভারত অভিযান শুরু হওয়ার অনেক আগেই মাওলিনং ভিলেজ স্বচ্ছতম গ্রামের শিরোপা লাভ করেছে। অনেকের কাছেই হয়তো আর পাঁচটা সাধারণ গ্রামের মতই মনে হতে পারে। তবে লক্ষ্যণীয় হচ্ছে স্বচ্ছ গ্রামের ট্যাগ দিয়ে ট্র্যাভেল মার্কেটিং, এবং এই বিষয়ে ১০০ ভাগ সফলতা। এবং শুধু মাত্র একটা এমন সামান্য বিষয়ে এভাবে মার্কেটিং করা যায় এটা অভাবনীয়।
ডাউকি লিভিং রুট ব্রিজ থেকে মাওলিনং ভিলেজে যাবার পথের বাঁদিকে পড়ে ব্যালেন্সিং স্টোন। এটা একটা তুলনায় অনেক ছোট উলম্ব পাথরের উপরে আড়াআড়ি আর একটা অনেক বড় পাথর। নিচের অংশটুকু লোহার জালি দিয়ে ঘেরা। কথিত আছে ১০০০ বছর আগে এখানেই গাঁও দেবতার বাস ছিল এবং ঐ পাথরের উপরেই মানুষ বলি দেওয়া হত। খ্রীষ্টান ধর্মের প্রসার হওয়ার পর থেকে এই গ্রামদেবতার পুজো দেবার পরম্পরা বন্ধ হয়ে যায়।
ঘরে ফেরার পালা
কথায় বলে, সব ভালো তার শেষ ভালো যার। আমাদের আর শেষ ভালো হল না বোধ হয়। গাড়ির সাথে কথা হয়েছিল সকাল ৭টায় গাড়ি লাগিয়ে দেবে, ৮টা বেজে গেছে গাড়ির দেখা নেই। ফোন করা হলো ১০.৩০ টার আগে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। গাড়ির চাকা পাংচার হয়ে গেছে। চেরাপুঞ্জি, মৌসুমী কেভ, নকালিকাই ফলস, সোরা, সেভেন সিস্টার্স ঘুরে গৌহাটিতে প্রত্যাবর্তন, এই ছিল মনের বাসনা। অতি দ্রুততার সাথে দ্বিতীয় গাড়ি ঠিক হল। বেরিয়ে পড়লাম পূর্বনির্ধারিত রাস্তায়। নকালিকাই ফলস ১০০ ভাগ মেঘে ঢাকা, ০% দৃশ্যমানতা। মৌসুমী কেভস ও সাত বোনেরা দর্শনার্থীদের হতাশ করেননি। নকালিকাই অদর্শনের হতাশা কিছুটা মিটল সাত বোনের কলকাকলিতে।
নকালিকাই থেকে ফেরার পথে বাজারে কং পরিচালিত নালগ্রে রেস্তোরাঁয় অসাধারণ সুখকর সুস্বাদু অনুভূতি নিয়ে দ্বিতীয় গাড়িতে আনন্দেই ঘুরছি, হঠাৎ ড্রাইভার নুরুল ইসলাম ঘোষনা করল, গাড়ির স্টিয়ারিং হুইল জ্যাম হয়েছে, এ গাড়িতে গৌহাটি যাওয়া যাবেনা। এটা একটা বড় ধরনের চাল বুঝতে অসুবিধা হল না। কারন গৌহাটি পৌঁছোতে রাত্রি ৯টা হয়ে যাবে এবং তারপর ওকে ভাড়া ছাড়া ফাঁকা আসতে হবে। তবুও চুপ করে থাকলাম, সাময়িক শান্তির শেষতম চেষ্টা অপারগ দূর্বল বাঙ্গালীর অনাক্রমন নীতি মেনে। গৌহাটি যাওয়ার আর একটি গাড়ি ঠিক করে দেবে এই বলে বর্তমান ড্রাইভার আমাদের আশ্বস্ত করল।
শেষ পর্যন্ত চেরাপুঞ্জি থেকে ফেরার পথে শিলং শহরের উপকন্ঠেই আর একজন অস্থিচর্মসার (গাড়ি ও ড্রাইভার উভয়েই) গৌহাটি ফেরৎগামী গাড়ির ড্রাইভার এর জিম্মায় আমাদের গতি করে সাময়িক স্বস্তি দিল, নাকের বদলে নরুন পেলাম …।
নতুন গাড়ির ড্রাইভার আমাদের লাগেজ বাঁধাছাঁদা করছে। যে হাত দিয়ে স্টিয়ারিং হুইল শান্ত রাখার কথা সেই হাতই দেখি রীতিমত অশান্ত, কি ব্যাপার? কারন জিজ্ঞেস করার আগেই সুবাসিত মদিরা তার উপস্থিতি জানিয়ে দিলো। প্রমাদ গুনলাম! তবে ভদ্রলোকের চুক্তি হল, গৌহাটি না পৌঁছানো অবধি সে আর অশান্ত হবে না বা আমাদের অশান্তি আর বাড়াবে না। যাই হোক, আশ্বস্ত হয়ে ইস্টনাম জপতে জপতে বার কয়েক অকস্মাৎ চাকার গতিরোধ জনিত কারনে গতিজাড্যতার আঘাত সহ্য করে অবশেষে গৌহাটিতে পৌঁছলাম। এবং পরদিন যথাসময়ে সুখনীড়ে।