পয়া কলম ।। লেখা : অমিতাভ সাহা
স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তার ধারে একটি খুব সুন্দর ডিজাইন করা কলম কুড়িয়ে পেল সমীর। কলমটার রিফিলে কালি শেষ হয়ে গেছিল। তাই বলে এত সুন্দর কলম কেউ ফেলে দেয়? ও পেনটাতে নতুন রিফিল ভরে নিল। কদিন ব্যবহার করার পর দেখল, এই পেনটা দিয়ে হাতের লেখা খুব সুন্দর হয়। মাস্টারমশায়ও হাতের লেখার প্রশংসা করতে লাগলেন। একদিন ক্লাস টেস্টের সময় একটা প্রশ্নের উত্তর কিছুতেই মনে পড়ছিল না সমীরের। ভাবতে ভাবতে পেনটা মাথায় ঠেকাতেই পুরো উত্তরটা মনে পড়ে গেল। ও বুঝতে পারল, এই পেনটা ওর জন্য খুব পয়া। সমস্ত পরীক্ষা এই পেনটা দিয়েই দিত।
একদিন বন্ধু সুরেশের সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে বলেই ফেলল, “জানিস, আমি একটা পেন কুড়িয়ে পেয়েছি। ওটা দিয়ে পরীক্ষা দিয়েই আমার রেজাল্ট ভালো হচ্ছে।” ইদানিং সুরেশের রেজাল্ট সমীরের থেকে খারাপ হত। ও পেনটা দেখতে চাইল। সমীর যেই দেখাল, ও মিছিমিছি ভান করে বলল, “ওহ হো! পেনটা তুই পেয়েছিস! আমি কত খুঁজেছি পেনটা। এটা তো আমার পেন।” সমীরের খুব মন খারাপ হল। ও সুরেশকে পেনটা দিয়ে দিল।
সুরেশ পরের পরীক্ষার দিন পেনটা নিয়ে গেল। পরীক্ষা ভালোই দিচ্ছিল। হঠাৎ দেখল, কলমে কালি পড়ছে না। রিফিল খুলে দেখল, কালি ঠিকই আছে। ঝাঁকিয়ে নিয়ে লিখতে লাগল। কিছুক্ষণ লেখার পর আবার কালি পড়ছিল না। আশ্চর্য যন্ত্রণা! একবার কালি পড়ে একবার পড়ে না। বারবার ঝাঁকাতে গিয়ে পেনটা হাত থেকে মেঝেতে পড়ে নিবটা গেল নষ্ট হয়ে। আর কিছুতেই লেখা পড়ছিল না। সুরেশ অন্য কোন পেনও নিয়ে আসেনি পরীক্ষা দিতে। এমনই কপাল! আশেপাশের বন্ধুদের কাছেও এক্সট্রা পেন ছিল না। বাধ্য হয়ে ছুটল বাইরে কাগজ কলমের দোকানে। পরীক্ষার হলের বাইরে প্রচন্ড রোদে দৌড়তে গিয়ে ঘেমে নেয়ে একাকার। কলম আনতে অনেকটা সময় নষ্ট হল। একটা জানা প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারল না সময়ের অভাবে। পরে ওর মনে হল, সমীরের কাছ থেকে ফাঁকি দিয়ে কলমটা নেওয়ার জন্যই ওর এই হয়রানি হল। অপরাধ বোধ হতে লাগল। সমীরের কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে কলমটা ফিরিয়ে দিল সুরেশ। সমীর কলমটা ফিরে পেয়ে খুব খুশি হল।