
বছর সাতেক পর
কলমে – রাজনন্দিনী
ছবি – নিকোলাস
প্রেম পর্বটা বেশ জমিয়ে চলেছিল ওদের। দীর্ঘ সাত বছরের প্রেম জীবনের পর ওদের চারহাত যেদিন এক হল, সেদিন ওরা একে অপরকে কথা দিয়েছিল, আগামী সাত জন্মেও একে অপরের প্রতি ভালবাসায় কোন অভাব হবে না ওদের।
আবীর, ওর মা-বাবা এবং শকুন্তলা, এই চারজনের সংসার ওদের। পড়াশোনায় খুব একটা খারাপ ছাত্রী ছিল না শকুন্তলা কোনও দিনই। তবে, যখন থেকে বিয়ে-সংসার ব্যাপারগুলো বুঝতে শিখেছে ও, তবে থেকেই ওর মনের সুপ্ত ইচ্ছে ছিল, বিয়ের পর গুছিয়ে সংসার করবে। বিয়ের আগে যদিও একটা চাকরী করতো, কিন্তু ক্যারিয়ার নিয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী কোনদিনই ছিল না ও। ওর ইচ্ছে একটাই মা-দিদুনের মত স্বামী-সন্তান নিয়ে মন দিয়ে ঘরকন্যা করার।
যে মেয়ে বিয়ের আগে এক গ্লাস জল ভরে খেত না, সেই মেয়েই বিয়ের পর থেকে সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ঘর গোছানো, টুকটাক রান্না করা, শাশুড়ির হাতে হাতে কাজ গুছিয়ে দেওয়া… এমন অনেক কাজ সারাদিনে আপন মনে করতে পারে এখন ও। কিন্তু তবুও কোন কাজে খুঁত যদিও থেকে যায় কখনও, শকুন্তলা আপ্রাণ চেষ্টা করে সে খামতি মেটানোর।
এদিকে আবীর ও বেশ ক’মাস হল ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ওর ব্যাংকের কাজ নিয়ে। বাড়ি ফিরেও বাবার সাথে বাড়ির ব্যবসার কাজের আলোচনা চলে দীর্ঘক্ষন…। এভাবেই চলছিল… কিন্তু হঠাৎ কেমন যেন একঘেয়ে হয়ে গিয়েছে রোজকার জীবনটা ওদের! আবীর এখন আর আগের মতো সময় দিতে পারেনা শকুন্তলাকে। সারাদিনের কাজের শেষে বাড়ি ফিরেও ল্যাপটপে মুখ গুঁজে কাজ করে যায়। আজকাল রাতে এক বিছানায় পাশাপাশি থেকেও কেমন যেন ভিনগ্রহের মানুষ ওরা দু’জন! কোথাও বাইরে গিয়ে সময় কাটানো তো দূরের কথা, আজকাল এক বাড়িতে থেকেও ওরা দু’জন দু’জনের অপরিচিত হয়ে উঠছে ক্রমশ…!
একঘেয়েমি জীবন ক্রমে গ্ৰাস করতে থাকে শকুন্তলাকে। অন্যদিকে এক এক করে সকলের চাহিদা বেড়ে চলে ওর প্রতি। হাসিমুখে সব কষ্টকে জয় করে নেওয়ার সংকল্প করে ও। কিন্তু ও ভুলেই গিয়েছিল যে, ও নিজেও একটা রক্ত মাংসে গড়া মানুষ! যার ভালোলাগা, মন্দলাগা, ইচ্ছে-অনিচ্ছেগুলো বর্তমান। নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দিয়ে সংসার আগলাতে গিয়েও, প্রতিনিয়ত যখন ওকে অকারণে ছোট ছোট কটু কথা শোনানো হয়, প্রতি ক্ষেত্রে খুঁত ধরা হয় ওর প্রত্যেকটা কাজে, তখন নিজেকে নিজেই অপরাধী ভাবতে শুরু করে শকুন্তলা। হঠাৎ করেই কেমন অপরিচিত হয়ে ওঠে ওর আশপাশের পরিচিত মানুষগুলো। কিন্তু তবুও কোন প্রতিবাদের ভাষা খুঁজে পায়না ও, নিজের মধ্যে গুমরে মরা ছাড়া। ধীরে ধীরে যন্ত্রমানবে পরিণত হয়ে পড়তে থাকে ও, অসুস্থ হয়ে পড়ে ওর মন, যে অসুখ ওষুধেও সারতে চায় না। মেয়ের শারীরিক ও মানসিক অবনতির কথা শকুন্তলার-ই এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর কাছ থেকে জানতে পেরে মা-হারা মেয়েকে লোক দেখানো কোন বাঁধনে আর আটকে না রেখে নিজের কাছে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেন রাজশেখরবাবু।
আজ দীর্ঘ সাত বছর পর আবার মুখোমুখি আবীর আর শকুন্তলা। আজ দুজনেই ওরা নিজেদের অতীতের মুখোমুখি। শকুন্তলার মাথার চওড়া সিঁদুররেখা দেখে এক দীর্ঘ আক্ষেপের নিঃশ্বাস পড়ল আবীরের নিজের অজান্তেই।
-“যাক, বিয়েটা আবার করেছ তবে?”
-“উপায় ছিল না গো আমার আর কোন, বাবা তখন মৃত্যুশয্যায়, একদিন বিমলকাকু ওনার ছেলের সাথে বাবাকে দেখতে এসেছিলেন বাড়িতে। বাবা ওর হাতে আমার দায়িত্ব দিয়ে যেন শান্তির নিশ্বাস নেয়। বাবা এবং বাবার প্রিয় বন্ধু বিমলকাকুর নাকি বরাবরের ইচ্ছে এটাই ছিল। বাবার শেষ ইচ্ছে না রেখে ফেলতে পারিনি!… বাবা চলে যাবার বছর দেড়েক পর বিয়েটা হয় আমাদের। কুশল খুব ভালো রেখেছে আমায়, এভরি উইকেন্ডে আমায় বাইরে নিয়ে যায়, আমার খুব কেয়ার করে, খুব চেষ্টা করে আমায় হ্যাপি রাখার। … বিমলকাকু, মানে বাপি এবং মামনিও খুব ভালো মানুষ। নিজের মেয়ের মত ভালোবাসেন আমায় ওনারা।”… এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে একটু থেমে আবার বলতে শুরু করে শকুন্তলা, “আমার কথা তো অনেক হল, এবার তোমার কথাও কিছু বলো… কেমন আছো? নতুন জীবন কেমন গুছিয়েছো? ইত্যাদি ইত্যাদি…!!”
এতক্ষণ মনোযোগ দিয়ে শকুন্তলার কথাগুলো শুনছিল আবীর। শুনছিল, নাকি বহুকাল পর নিজের প্রাক্তন স্ত্রীকে দেখে বহু বছরের ক্ষতে প্রলেপ লাগাচ্ছিল জানা নেই! এবার,এক গাল চওড়া হাসি মুখে ছড়িয়ে আবীর উত্তর দিল, “কাউকে যে আর পেলাম না কুন্তলা, আমার অগোছালো জীবনটাকে তোমার মতো করে গুছিয়ে দেওয়ার জন্য, দেখছো তো কেমন অগোছালো আজও আমি, ঠিক আগের মতই।… যাকগে, আমার কথা ছাড়ো, তোমার কুশল নিশ্চয়ই তার ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে রেখেছে তোমায়। এখন নিশ্চয়ই আগের মত কষ্ট পেতে হয় না আর তোমাকে!”
এক চিলতে হাসি ঠোঁটে মেখে শকুন্তলা বললো, “হুমমম্! সব দিয়েছে কুশল আমায়, কিন্তু আজও ওর ভালবাসাকে আপন করে নিতে আমি ব্যর্থ আবীর! কারণ মনের গোপন কুঠুরিতে আজও যে একজনের ভালোবাসা আমায় কুরে কুরে খায়!”… শেষের কথাগুলো বলতে গিয়ে শকুন্তলার ভেতরটা এক অসহ্য যন্ত্রণায় শেষ হয়ে যাচ্ছিল যেন!
ততক্ষণে রাস্তার ওপারে অফিস ফেরত বউকে নিতে কুশলের ব্রাউন কালার এর অল্টোটা এসে দাঁড়িয়েছে। আবীরকে বিদায় জানিয়ে, নিজেকে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক করে নিয়ে, গাড়ির জানালায় কুশলের ইশারায় সাড়া দিয়ে রাস্তা পার হতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল শকুন্তলা।
বুকের বাঁ দিকটা হঠাৎ কেমন মোচড় দিয়ে উঠলো যেন আবীরের! ডান হাতের মুঠোয় বুকটা খামচে ধরে, শকুন্তলার চলে যাওয়া দেখতে দেখতে অস্ফুটে বলে উঠল ও, “দেখা হল বছর সাতেক পর, তুই এখন অন্য কারও ঘর!”
দারুণ লেখা
ধন্যবাদ ?
ধন্যবাদ ?
খুব সুন্দর
ধন্যবাদ ?
Khub bhalo lagchhe…agami porber opekkhay thaklam.
ধন্যবাদ। চেষ্টা করব।?
285179 488218Not long noticed concerning your internet website and are still already reading along. I assumed ill leave my initial comment. i do not verify what saying except that Ive enjoyed reading. Good blog. ill be bookmarking keep visiting this web web site genuinely normally. 606451
849136 507123Id need to consult you here. Which is not some thing Its my job to do! I spend time reading an article that could get men and women to believe. Also, several thanks for permitting me to comment! 743975
854712 512795I got what you intend, saved to bookmarks , very decent internet internet site . 577299
197445 327688Immigration […]the time to read or go to the content material or websites we have linked to below the[…] 770792
Like!! Really appreciate you sharing this blog post.Really thank you! Keep writing.
763138 745539This internet page could be a walk-through like the data you wanted concerning this and didnt know who want to. Glimpse here, and you will undoubtedly discover it. 219106
934188 139899I always was interested in this subject and nonetheless am, thankyou for posting . 195516
875933 645539I like this site so much, bookmarked . 169031
750168 604377Hey, you used to write great, but the last several posts have been kinda boring I miss your tremendous writings. Past few posts are just slightly bit out of track! come on! 626798