মৌচুকির পথে

 

 

 

প্রথম দিন।

মৌচুকি ফরেস্ট বাংলো লাটাগুড়িতে বুকিং করে চালসা থেকে দু-কেজি মাংস আর পরদিন Trekking এর জন্য কিছু ফল আর শুকনো খাবার কিনে বাইকে ঝুলিয়ে একে একে মেটেলি , সামসিং পেরিয়ে ন্যাওড়া ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের মৌচুকি পাহাড়ের ঠিক নিচেই ছবির মতো সুন্দর আর শীতকালের নদীর মতো শান্ত মন্ডলগাঁওে যখন আমরা পৌছঁলাম তখন বিকেল।

কিং লিয়ান হোমস্টের মালিকের ছোটো ছেলে লিয়ান বাবার অনুপস্থিতিতে স্কুল থেকে ফিরে অতিথিসেবার সব দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিল। আমাদের ছোটোবেলার মতো বুঝতে পেরেছে, বোধহয় আজ পড়াশোনার ইতি। লিয়ানকে সঙ্গে নিয়েই দিনের আলো থাকতে থাকতে পায়ে পায়ে ঘুরে দেখে নিলাম পাহাড়ের ঠিক নিচের জঙ্গল সাফ করে স্ট্রবেরি, বড়ো এলাচের চাষ শুরু হওয়া গ্রামটা।  অনেক উচুঁতে পাহাড়ের মাথায় দেখা যাচ্ছে মৌচুকি ফরেস্ট বাংলো যা ভূতবাংলো নামেও কুখ্যাত। রাতে দুভাগে মাংস রাঁধলাম আমরাই। অর্ধেকটা chicken dry fry অর্ধেকটা চিলি চিকেন। প্রথম tester লিয়ান। ওর মুখের হাসিই বুঝিয়ে দিল test terrific হয়েছে। সকালে ট্রেকিং। তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া সেরে ঘুমিয়ে পড়তে পড়তে শুনলাম পাশের বাড়িতে মার কাছে লিয়ানের আগামীকাল স্কুলে না গিয়ে আমাদের সাথে ট্রেকিং যাবার অনবরত গুনগুন করে আবদার। নিস্তব্ধ মন্ডলগাঁওের বাতাসে সেই শব্দ মৌমাছির গুঞ্জনের মতো লাগলো……..

 

দ্বিতীয় দিন।

সকালবেলা দেখলাম আশেপাশের পাহাড়ী  গ্রামগুলো থেকে ডল্লো খুরসানি আদা, আলু, ফুলঝাড়ু এসব নানা ফসল এনে মন্ডলগাঁওে জড়ো করছে। আড়তদারেরা এসে নিয়ে যাবে। সকালের খাবার খেয়ে আমরা মৌচুকি ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে পাহাড়ে ওঠা শুরু করলাম। না, লিয়ানকে ওর মা আমাদের সাথে যেতে দেয়নি। সকালে যখন ও গোমড়া মুখে স্কুল যাচ্ছে তখন ওর হাতে অল্পকিছু টাকা গুজেঁ দিলাম টিফিন টাইমে পছন্দমতো জিনিস খাবার জন্যে। প্রায় একঘন্টা ওঠবার পর যে জায়গাটায় থামলাম একটু বিশ্রাম নেবার জন্য সেখান থেকে নিচে মন্ডলগাঁওের গুম্ফা, বাড়িঘর, খেতখামারসহ পুরো ভ্যালিটা অপূর্ব লাগছে। আমরা একটা পকেট অডিও সিস্টেম নিয়ে গিয়েছিলাম তাতে গান চালিয়ে আমাদের দলের দুই সহযাত্রী যখন মৃদুতালে নাচছে  তখন নিচ থেকে আমাদের রাস্তা ধরেই উঠে আসলো এক নেপালী বৃদ্ধ। মদ খেয়ে একদম টুংটাং অবস্থা। আমাদের অনুমতি নিয়ে গানের তালেতালে পাক খেয়ে যে নাচটা নেচে গেল তা অনেকদিন মনে থাকবে। তার কাছেই শুনলাম একটু দুরে গুম্বাদারা বলে একটা সুন্দর জায়গা আছে। ঠিক হল আমরা সেটা ঘুরে তারপর মৌচুকি ক্যাম্প যাব। সেখানে যেতে গিয়ে দেখা পেলাম একটা ঝর্ণা আর একদল সচেতন বাবা মার যারা এতটা পাহাড়ী পথ বেয়ে মন্ডলগাঁও যাচ্ছে বাচ্চাদের ভ্যাকসিন দিতে। গুম্বাদারায় আছে একটা বৌদ্ধ গুম্ফা, একটা প্রাইমারি স্কুল তার সুন্দর খেলার মাঠ, কয়েকঘর বসতি আর অসাধারন প্রাকৃতিক দৃশ্য। ফেরার পথে ঝর্ণার পাশে সঙ্গে আনা খাবার খেয়ে এবার রওনা হলাম মৌচুকির উদ্দেশ্যে। উঠে যাচ্ছি তো উঠেই যাচ্ছি, মৌচুকি ক্যাম্পের দেখা নেই। পথে ফরেস্ট গার্ডরা জানালো যেহেতু বসতি বেশী নেই  তাই এই পাহাড়ে অনেক রকম জানোয়ার আছে এমনকি রয়্যালবেঙ্গল টাইগারও। তারপর আবার শর্টকার্ট নিতে গিয়ে রাস্তা হারিয়ে বিচ্ছিরি অবস্থা। ঠিক যখন মনে হচ্ছে পায়ে হেটে আসাটা বোধহয় ঠিক হয়নি, ঠিক তখনি একটা টার্ন নিয়ে দেখতে পেলাম মৌচুকি ক্যাম্প। একদম জনমানবহীন। একলা দাঁড়িয়ে আছে। পাহাড়ের মাথায় হাল্কা মেঘের মাঝে। চারপাশে, নীচে দেখা যাচ্ছে পাহাড়ের সারি। আমরা একমত হলাম যে, এসে ভুল করিনি.

 

লেখা ও ছবি :  নীলাঞ্জন

 

Mouchukir Pothe     |     Nilanjan     |    Nilanjan    |     www.pandulipi.net     |     Travelogue    |     Bengali

Author: admin_plipi