নীল ধ্রুবতারা

নীল ধ্রুবতারা ।। লেখা :গোবিন্দ মোদক

পোশাকি নাম স্বপ্ননীল হলেও সবার কাছে সে নীল। বছর আটেক বয়স নীলের। একমাথা কোঁকড়ানো চুল, নীলাভ চোখ আর মায়াময় চাউনির জন্য সবার কাছেই নীল অত্যন্ত আদরের। তার চোখ দু’টিতে অপার বিস্ময়, মনে হয় যেন নীল অন্য সবার তুলনায় তার দু’চোখ দিয়ে আরও অনেক কিছু দেখতে পায়। যেমনভাবে সে দেখতে পেয়েছিল তার ধ্রুবদাদুকে। সেদিন বাড়ির পিছনের পুকুরে আনমনে হাঁসেদের সাঁতার কাটা দেখছিল নীল। হঠাৎই নীল রঙের ঢোলা পোশাক পরা একজন বৃদ্ধ এসে হাজির। নীলকে ডেকে বলল, “তোমাকে আমার খুব ভালো লাগে। এই নাও ছোলাভাজা খাও।”দু’চোখে অপার বিস্ময় নিয়ে নীল প্রশ্ন করে, “কে তুমি? কি নাম তোমার? কোথায় থাকো? আমাকে চিনলে কি করে?”-“ওরে বাবা! এতো প্রশ্ন একসঙ্গে! আচ্ছা শোনো, আমার নাম ধ্রুব। থাকি ঐ উত্তরে। আর সবাইকে দেখে রাখাই তো আমার কাজ। তাই তোমাকেও চিনি ! -“সে আবার কেমন কথা! তোমার নাম ধ্রুব? উত্তরে থাকো? সে তো উত্তর দিকে ধ্রুবতারাও থাকে। আমি পড়েছি, আমাদের পরিবেশ-পরিচিতি বইতে লেখা আছে।” -“বই তো ঠিক কথাই লিখেছে। আর আমিও ঠিক কথাই বলছি।” -“তার মানে তুমি ধ্রুবতারা? বাহ্ বাহ্! খুব ভালো!” হাততালি দিয়ে বলে ওঠে নীল। তারপর দু’চোখে মুগ্ধতা এনে বলে, “আমি তোমাকে ধ্রুবদাদু বলেই ডাকবো!”-“বেশ তো, আজ থেকে তুমি আমার ছোট্ট বন্ধু হলে! কেমন কি না!”-“বেশ ! হাত বাড়াও তবে!…”-“এ কি! কার সঙ্গে কথা বলছিস রে নীল?”-“এই তো বাবা, ধ্রুবদাদুর সঙ্গে। ধ্রুবদাদু খুউব ভালো। উত্তর আকাশে থাকে।”-“পাগল ছেলে একটা! কোথায় তোর দাদু! সব সময় স্বপ্নের ঘোরে থাকে! চল, বাড়ি চল, মা খেতে ডাকছে।” সেদিনের মতো নীল চলে যায়। তারপর প্রতিদিন নিয়ম করে নীলের সঙ্গে দেখা হতে থাকে তার ধ্রুবদাদুর। … এভাবে কেটে যায় আরও দশটা বছর। নীলের উচ্চমাধ্যমিক ও জয়েন্টের পরীক্ষা শেষে নীল এবার শহরে পাড়ি দেবে উচ্চতর পাঠের জন্য। …-“ভালো থেকো নীল দাদুভাই। মন খারাপ কোরো না। যখনই আমাকে দেখতে চাইবে তখনই তুমি উত্তরদিকে মুখ করে আমার কথা স্মরণ কোরো। আমি আসবো।”-“কথা দিলে কিন্তু ধ্রুবদাদু!” -“দিলাম!”নীলের গাড়ি চলতে শুরু করে। বাষ্পাচ্ছন্ন চোখে নীল দেখতে পায় ধ্রুবদাদু হাত নেড়ে তাকে বিদায় জানাচ্ছে!

Author: admin_plipi