সময়টা কত ঘড়ি দেখিনি। তাও মাঝরাত তো হবেই। সেদিন কেন জানিনা ঘুম আসছিলনা । হয়তো আমার ভবিতব্য , আমার অক্ষমতা আমাকে আঁকড়ে রেখেছিল।
আমার নাম আনন্দমোহন রায় , পেশায় শিক্ষক ছিলাম এখন অবসরপ্রাপ্ত এবং প্যারালাইসিস এ আক্রান্ত । আমার শরীরের বাম দিকটা প্রায় অকেজো , তবে ডান দিকে ভরদিয়ে খাটে উঠে বসতে পারি। সেই দিন ও তাই করলাম । ভিতরে কেমন একটা অসওয়াস্তি। জানলাটা খোলা। আমার শহর ঘুমোচ্ছে। কিছুদিন আগে পুজো চলেগেছে , কিন্তু রেখেগেছে তার ছাপ স্বরূপ রাস্তায় আঁকা আল্পনা। আকাশের দিকে তাকালাম। হেমন্তের রাত, তাই আকাশটা প্রায় পরিষ্কার বলা চলে । এটা উত্তর কোলকাতা বলে গাড়ি-ঘোড়া রাতের দিকে একটু হলেও কমই চলে। আর আমার এই বাড়িটা একটু ভিতর দিকে হওয়াতে যন্ত্রের যান্ত্রিক শব্দ একটু কমই আসে । আকাশে ওই যে তারা দেখা যাচ্ছে, ওর কোনোটাতেই আমার স্ত্রী রমা আছে । আজ দু বছর হয়ে গেল আমাকে একা করে চলে গেছে। বাড়ির লোক বলতে এখন আমার ছেলে সুবিমল , তার ভরা সংসার। স্ত্রী ,ছেলে-মেয়ে নিয়ে গুছিয়ে সংসার ।
এখন এসে মনে হয় মৃত্যু ডাকলেও ভয় নেই , সবই তো হলো , এবার খেলা সাঙ্গের পালা । ওই অন্ধকার গলি দিয়ে চলে যাবো অতলের গভীরতায় , ওই কালো রাতের আকাশে ‘তারা’ হয়ে । এই সব উল্টো পাল্টা চিন্তা করতে কখন ঘুমিয়ে গেছি কে জানে , ঘুম ভাঙল ভোরে। কিন্তু আশপাশে এত কুয়াশার জটাজাল কেন? হেমন্তের সকাল হলেও এতটা কুয়াশা তো হবার কথা নয়!
অদ্ভুত ভাবে শরীরটাও ভীষণ হালকা লাগছে। সেই অক্ষমতাও আর নেই , তবে কি এটাই মৃত্যু এটাই মুক্তি ? দূরে কোথাও থেকে ভেসে আসছে ” এই আকাশে আমার মুক্তি…..”
লেখাঃ রাজশেখর
ছবিঃ কুণাল
Tara | Rajsekhar | Kunal | www.pandulipi.net | Emotional | Bengali | Story