খড়্গবাহাদুর লোহার। ৫৫ বছরের নেপালি যুবক। অরিজিন — ডিকতেল, নেপাল। বহুবছর যাবৎ রিয়াংয়ের বাসিন্দা। রিয়াং, রম্বি বাজারের অদূরে তিস্তার গা-য়ে ঢলে পড়া জনপদ, তিস্তার স্রোত ব্যতীত নৈঃশব্দপ্রবণ। ব্রিটিশ আমলে টানা রেলপথ ছিল রিয়াংয়ের উপর। এন.জে.পি. থেকে তিস্তা বাজার অবদি চলত পণ্যবাহী ট্রেন। ১৯৬৬-তে তিস্তার বন্যায় চিরতরে ধ্বসে যায় এই ট্র্যাক।
খড়্গবাহাদুর বনদপ্তরের পুরনো কর্মী (স্থায়ী নয়)। মাসে উপার্জন চার হাজার। নার্সারির কাজে প্রাজ্ঞ। ওঁর স্নেহাদরে জারুল, কিঞ্জল, বহেরা, চিকরাশি, পাকাসাঁজ, পানিসাঁজ গাছ জন্মায়, বেড়ে ওঠে উপত্যকার মাটিতে।
বীজ পাকার সময়, বীজের প্রাপ্তিস্থল, বিস্তার সহ যাবতীয় তথ্য খড়্গ-র আত্মস্থ। নার্সারিতে সিবলিং তৈরি করে প্ল্যান্টেশন করে অগণন গাছের চারা। গাছ সনাক্তকরণেও সে তুলনারহিত দক্ষ ।
তিন ছেলের দু’জন বিবাহিত। এদের একজনের ছেলে, বয়সে ছোট স্বভাবত। অর্থাৎ ধরা যায়, নাতিসঙ্গে কিছু সময় কাটায় খড়্গ।
বাড়ির ক্ষেতে চাষ করা আদা যথেচ্ছ পরিমাণ দিয়ে আসে কর্মক্ষেত্রে প্রিয় উর্দ্ধতনের কোয়ার্টারে। টাকা দিতে চাইলে অপমানে লাল হয় দু’চোখ।
ছোট বাড়িতে অনিবার্য স্থানসংকুলান। সহ্যাতীত ঠান্ডায় উঠোনের একটা চৌকিতে ঘুমায় খড়্গ, গলা পর্যন্ত মাল খেয়ে।
এই মদ্যপানের পিছনে এক তীব্র বিষাদ আছে। বছর দশেক আগে জ্বালানির জন্য কাঠ কাটতে নিয়ে পা পিছলে তিস্তার গর্ভে চলে যায় খড়্গর বৌ। এই চিরস্থায়ী আঘাতে খড়্গ পাল্টে যায় পুরোটা। মদনির্ভরতা বেড়ে যায় ক্রমশ।
আকন্ঠ গিলে বেখেয়ালি খড়্গ কখনো বা গুঁতো খায় মৌচাকে। বিষদগ্ধ চোখ-নাক, লালাবহুল মুখে আকাশের দিকে তর্জনী তুলে সারারাত অস্ফুটে খিস্তি মারে খড়্গ।
কাকে?
লেখা ও ছবি ঃ সুপ্রতিম
Khargabahadur | Supratim | Supratim | www.pandulipi.net | Bengali | Story
[quads id=1]